নদী কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি

নদী কাকে বলে, নদী কত প্রকার ও কি কি,

আপনি কি জানেন নদী কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? নদী বলতে সাধারণত বোঝায় পৃথিবীর উপরিভাগ দিয়ে প্রভাবিত হওয়া স্বাভাবিক জলধারা। খাদ্য উৎপাদন, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদী শব্দের সমার্থক শব্দগুলো হল: তটিনী, তরঙ্গিনী, সরিৎ ইত্যাদি। সাধারণত ঝর্ণা, বরফ গলিত স্রোতধারা থেকে প্রাকৃতিকভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে নদীপথ হয়েই পানি সাগর-মহাসাগর বা হ্রদ এ পতিত হয়।

তবে নদীর পানি যে সব সময় গন্তব্যে পৌঁছাবে বিষয়টা তেমন নয়। ভৌগোলিক অবস্থান এবং কাঠামোগত কারণে নদী কে শাখানদী বা উপনদী হিসেবেও অভিহিত করা হয়। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর জীবনাবস্থা সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে: নদীর যৌবন অবস্থা, নদীর পরিপক্ক অবস্থা এবং নদীর বৃদ্ধাবস্থা। চলুন তাহলে নদী কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

নদী কাকে বলে

নদী কাকে বলে, নদী কত প্রকার ও কি কি,

নদী হল প্রাকৃতিক স্বাদুপানির পানির সবচেয়ে ভালো উৎস। যা স্থলভাগে এবং গুহার ভিতরে পানির একটি অংশের দিকে কম উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। একটি নদীর গতিপথ সাধারণত সাগর-মহাসাগর এর দিকে হয়ে থাকে। তবে নদীর সব অবস্থাতেই সাগর-মহাসাগর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোহনায় পৌঁছানোর আগেই নদী শুকিয়ে যেতে পারে। মানব সভ্যতা এবং প্রাণিজগত টিকিয়ে রাখার জন্য নদী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিছু কিছু নদীকে আবার আদর্শ নদী বলা হয়ে থাকে। যেসব নদীর মধ্যে উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন এই তিনটি গতি বিদ্যমান থাকে তাকে আদর্শ নদী বলা হয়ে থাকে। আদর্শ নদী গুলোর মধ্যে গঙ্গা নদী অন্যতম। নিচের অংশে আমরা নদীর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নদী কত প্রকার ও কি কি

নদী কাকে বলে, নদী কত প্রকার ও কি কি,

নদীর শ্রেণীবিভাগ সাধারণত নির্ভর করে নদীর উৎপত্তিস্থল, নদী প্রবাহের গতিবিধি এবং ভূমিস্থল এর উপরে। নদীকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নদীর প্রকারভেদ গুলো হল:

  • উৎপত্তির ভিত্তিতে,
  • প্রবাহের গতির ভিত্তিতে,
  • ভূমির উপর ভিত্তি করে।

উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে নদীকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

বৃষ্টিপাত জনিত নদী

বৃষ্টির পানি থেকে ছোট আকৃতির নদী তৈরি হতে পারে। অনেক সময় কিছু কিছু ছোট নদীর উৎপত্তি বৃষ্টিপাত জনিত কারণে হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত থেকে যে সব নদীর সৃষ্টি হয় সেসব নদীর পানির পরিমাণ সাধারণত বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। বৃষ্টির পরিমাণ বাইরের নদীর পানির পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায়। আবার অনেকদিন যাবত বৃষ্টিপাত না হলে নদীর পানি শুকিয়ে নদী মৃত প্রায় হয়ে যায়।

হিমবাহজাত নদী

যেসব নদীর উৎপত্তিস্থল সাধারণত হিমবাহ হয়, যা বিশাল আকৃতির খন্ড হয়ে ধীরে ধীরে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে নেমে আসে তাকে হিমবাহ জাত নদী বলা যেতে পারে। হিমবাহ আস্তে আস্তে গলে নদীর সৃষ্টি করতে পারে। হিমবাহজাত নদীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হল: ঠান্ডা পানি, পরিষ্কার পানি, পরিবর্তনশীল প্রবাহ এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ মিশ্রিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ভারতের গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে এসেছে।

অববাহিকা নদী

অববাহিকা নদী গুলো সাধারণত সমতল ভূমি থেকেই উৎপত্তি হয়। এই নদীর বিশেষত্ব হল: আবুবায়িকা নদীর ধীর গতিতে প্রবাহিত হয় এবং অববাহিকা নদীর পানি পরিমাণ কতটুকু হবে তা নির্ভর করে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণের উপর।

প্রবাহের গতির ভিত্তিতে

প্রবাহের গতির ভিত্তিতে নদীকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

  • দ্রুত প্রবাহী নদী,
  • ধীরগতির নদী।

দ্রুত প্রবাহী নদী 

কিছু নদী রয়েছে যেগুলো পাহাড়ি অঞ্চল বা ঢালু জমিতে অবস্থিত হয়ে থাকে, এই নদীগুলোর পানিপ্রবাহ খুবই তীব্র ধরনের হয়ে থাকে, পাশাপাশি এই নদীগুলো বেশি পরিমাণে জলরাশি বহন করতে সক্ষম। তীব্র পানি প্রবাহ রয়েছে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এসব নদীতে দ্রুত প্রবাহী নদী বলা হয়ে থাকে।

এই নদী গুলোর বিশেষত্ব হল, দ্রুত প্রবাহী নদী খুব বেশি গভীর হয় না। কিন্তু এই নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা প্রবল থাকে। অর্থাৎ যে স্থলের উপর দিয়ে দ্রুত প্রবাহী নদী অতিক্রম করে সেই স্থল কিছুটা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

ধীর গতির নদী

বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী ই ধীরগতির নদী। যেসব নদী সমতলভূমিতে অবস্থিত এবং যেসব নদীর গতি তুলনামূলক কম তাদেরকে ধীরগতির নদী বলা হয়ে থাকে। এসব নদীর গভীরতা বেশি থাকে এবং খুব কম পরিমাণে জলরাশি বহন করতে সক্ষম। এদের প্রবাহ কম হওয়া সত্বেও এদের গভীরতা চোখে পড়ার মতো। দ্রুতগতি নদীর তুলনায় ধীরগতির নদী কয়েক গুণ বেশি পলি বহন করতে সক্ষম।

ভূমির উপর ভিত্তি করে নদী

ভূমির উপর ভিত্তি করে নদীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

  • নদীর যৌবন অবস্থা, 
  • নদীর পরিপক্ক অবস্থা
  • নদীর বৃদ্ধাবস্থা।

নদীর যৌবন অবস্থা

যদি কোন নদী সাময়িক সময়ের মধ্যে তৈরি হয় এবং নতুন তৈরি হওয়া সত্বেও যদি নদী প্রবাহ খুবই দ্রুত হয় তাহলে বুঝতে হবে নদীর যৌবন অবস্থা চলছে। যেসব নদী পাহাড় অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রবাহিত হয় সেসব নদীকে যৌবনকালীন নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নদীর যৌবন অবস্থায় নদী বারবার দিক পরিবর্তন করে এবং গতিপথ পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে।

নদীর পরিপক্ক অবস্থা

যদি কোন নদীর গতিপ্রবাহ কিছুকাল আগেও অস্থির প্রকৃতির ছিল কিন্তু বর্তমানে কিছুটা স্থির প্রকৃতির হয়েছে, এমন নদী পরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় নদী কিছুটা ধীর প্রকৃতির হয় এবং এই অবস্থায় নদী ঘনঘন দিক পরিবর্তন করে না। যেসব নদী বর্তমানে সমতল স্থানে প্রবাহিত হচ্ছে সেসব নদী পরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

নদীর বৃদ্ধাবস্থা

যেসব নদীগুলো বহু যুগ ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছে এবং যদি কোন নদীর পানি প্রবাহ ও ইতোমধ্যে ধীরগতির হয়ে থাকে সেসব নদী বৃদ্ধ অবস্থায় পতিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে নদীর এই বৃদ্ধ অবস্থায় কিছু সমস্যা ও রয়েছে। নদী যৌবন অবস্থা থেকে বৃদ্ধ অবস্থায় পতিত হওয়া পর্যন্ত এই লম্বা সময়ে নদীর চারপাশ ধীরে ধীরে ভরাট হতে থাকে।

 আরো পড়ুন 

এতে করে নদীর নিজের প্রয়োজনে গতিপথ বারবার পরিবর্তন করতে হয়। যেসব নদীগুলো সমুদ্রের আশেপাশে রয়েছে সেসব নদীগুলো বৃদ্ধাবস্থায় পতিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

নদী সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

বর্তমানে বাংলাদেশে উপনদী এবং শাখা নদীসহ নদী খাতের দৈর্ঘ্য হলো ২২ হাজার ১৫৫ কিলোমিটার।

পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী হিসেবে নীলনদ কে বিবেচনা করা হয়। নীলনদ এর বর্তমান দৈর্ঘ্য হল ৪১৩২ মাইল।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী হিসেবে ইছামতি নদী পরিচিত। যা চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরার উপর দিয়ে এই নদী প্রবাহমান।

বাংলাদেশের নতুন তম নদী হল যমুনা যা ১৭৮৭ সালের ভূমিকম্পে যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এই নদীর দৈর্ঘ্য হল ২৪০ কিলোমিটার।

বর্তমানে দেশের দীর্ঘতম নদী হল ইছামতি। ইছামতি নদীর বর্তমান দৈর্ঘ্য হল ৩৩৪ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের দশটি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান।

নদী সম্পর্কে আমাদের মতামত

আমাদের আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে নদী কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি এ সম্বন্ধে। নদীর প্রকারভেদ এবং নদীর জীবন অবস্থা সম্পর্কে আমরা আমাদের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। নদী সম্বন্ধীয় আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

নদী সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *