যে ব্যক্তি নিয়োগ কারীর সম্পদ, মালামাল, গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম রক্ষা করেন তাকে নিরাপত্তা প্রহরী বলা হয়। সাধারণত সরকারি বা বেসরকারি দল অথবা অফিস এর মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রহরীর নিয়োগ প্রদান করা হয়। এক কথায় নিরাপত্তা প্রহরী হল একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অপচয়, ক্ষতি, অপরাধ এবং অনিরাপদ কর্মীদের আচরণ তত্ত্বাবধান করার জন্য নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা প্রহরী সর্বদা টহল এর মাধ্যমে এবং সিসি ক্যামেরার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। নিয়োগ দানকারী প্রতিষ্ঠানে আগমন এবং বহির্গমন হয়েছে এমন সকল যানবাহনের রেজিস্টার নথিভুক্ত করা ও নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ।
নিরাপত্তা প্রহরই সবসময় সন্দেহমূলক সকল ঘটনায় সারা প্রদান করেন এবং ঠিক সময় মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। নিচে আমরা নিরাপত্তা প্রহরী কাকে বলে? নিরাপত্তা প্রহরী কাজ কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্টের বিষয়বস্তু
নিরাপত্তা প্রহরী কি
যে ব্যক্তি নিয়োগ দানকারী ব্যক্তি বা তার সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন তাকে নিরাপত্তা প্রহরী বলা হয়। অফিস, বাসা বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীর নিয়োগ প্রদান করা হয়। একজন নিরাপত্তা প্রহরীর প্রধান কাজ গুলো হলো: পর্যবেক্ষণ করা, রিপোর্ট পেশ করা, সুরক্ষা প্রদান করা এবং তথ্য সংগ্রহ করা।
নিরাপত্তা প্রহরী শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে, তুলনামূলক শক্তিশালী এবং সুস্থ ব্যক্তিদের কে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিরাপত্তা প্রহরী সর্বদা দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং ধৈর্যশীলতার পরিচয় প্রদান করে থাকেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।
নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব ও কর্তব্য কি
একজন নিরাপত্তা প্রহরীর প্রধান কাজ হল ব্যক্তি এবং সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করা। যে কোন অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখি হলে নিরাপত্তা প্রহরীর তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করবেন। একজন নিরাপত্তা প্রহরির বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নিচে সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব:
১)স্থানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা পালন করা
নিরাপত্তা প্রহরই প্রবেশদ্বারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকে। তিনি তার কার্যরত প্রতিষ্ঠানে প্রধান গেটে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা করবেন। এবং অফিস বা বাসা বাড়ি কর্তৃক নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে নির্দেশনা প্রদান করা হবে তার শতভাগ পালন করা নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব।
২)সংস্থা বা স্থানের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা
সংস্থার অভ্যন্তরে সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা নিরাপত্তা প্রহরির দায়িত্ব। এবং সেই তথ্যগুলো একই সাথে মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি খুঁজে বের করাও নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বের আওতায়। নিরাপত্তা প্রহরী অফিসের সাথে আলোচনা করে সুরক্ষার পরিকল্পনা করবেন, প্রবেশন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সম্পত্তির মূল্যায়ন করবেন।
৩)প্রতিষ্ঠানের বা উদ্যোগের সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা করা
প্রতিষ্ঠানের যেসব নিরাপত্তা নীতি এবং প্রকল্প রয়েছে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা করা নিরাপত্তা প্রহরের প্রথম দায়িত্ব। অফিস কর্তৃক নতুন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেখানে নিরাপত্তা জনিত কোন ইস্যু থাকলে তা নিরাপত্তা কর্মীকে জানানো হয়। নিরাপত্তা কর্মী সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের সিকিউরিটি প্রদান করার দরকার হয় তা করে থাকেন।
৪) সন্দেহজনক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা
অফিসের আশেপাশে বা অফিসের ভিতরে সন্দেহজনক কোন কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হলে সবার আগে নিরাপত্তা কর্মি সবার আগে তা নোটিশ করবেন। অফিসে জানানোর সময় না পেলে নিজ থেকেই তত্ত্বাবধান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার
৫) যাতায়াতকারী ব্যক্তিদের নথিভুক্ত করা
বাসা বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কতজন ব্যক্তি ঢুকছেন এবং বের হচ্ছেন এবং সন্দেহজনক কোন কার্যকলাপ করছেন কিনা তা নথিভূক্ত করবেন নিরাপত্তা কর্মী। যাতায়াতকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে কোন অবৈধ সরঞ্জাম রয়েছে কিনা বা তিনি ঢোকার সময় যে অবস্থায় ঢুকেছেন বের হওয়ার সময় অন্য অবস্থায় বের হচ্ছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন নিরাপত্তা কর্মী।
৬) গাড়ি চেক করা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা
বাসা বাড়িতে, কল কারখানায়, অফিসে প্রতিনিয়ত যেসব গাড়ি চলাচল করছে সেসব গাড়ির নাম্বার, গাড়ির ভেতরে কে আছে, গাড়ির ভিতরে কি কি মালামাল রয়েছে তা নথিভুক্ত করার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রহরীর। এছাড়া বাসা বাড়িতে এবং অফিসে অযাচিত কোন লোক যেন না ঢুকে তা তত্ত্বাবধায়ন করবেন নিরাপত্তা প্রহরী।
৭) সহকর্মীদের সহযোগিতা করা
একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরীর যেসব সহকর্মী রয়েছে তাদের বিভিন্ন দরকারে সাহায্য করার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রহরীর রয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরীর থেকে উচ্চ পদে আসীন রয়েছে এমন সহকর্মী দের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে। সহকর্মীরা যেন সর্বদা নিরাপত্তার বেড়াজালে থেকে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে খেয়াল তা রাখার দায়িত্ব নিরাপত্তা কর্মীর।
ডিসি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ কি
ডিসি অফিস যেহেতু একটি জেলার প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র তাই এখানে যে নিরাপত্তা প্রহরী কাজ করে তার দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিসি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর ২৪ ঘন্টা সচেতনতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে। নিচে আমরা ডিসি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ তুলে ধরছি:
- অফিস নজরদারিতে রাখা,
- অফিসে অনধিকার প্রবেশ থেকে অফিসকে রক্ষা করে,
- ডিসি অফিসের মূল্যবান কাগজপত্র, কম্পিউটার এবং ফার্নিচার যাতে চুরি বা নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন,
- তাৎক্ষণিকভাবে যদি অফিসে কোন অবস্থায় আগুন লাগে তাহলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে কল করার দায়িত্ব নিরাপত্তা কর্মীর উপর বর্তায়,
- অফিসে কোনরূপ অযাচিত ঘটনা ঘটলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রশাসনকে খবর দেওয়ার দায়িত্ব নিরাপত্তা কর্মীর।
এছাড়াও ডিসি অফিসে নিরাপত্তা কর্মী সর্বদা অফিস পরিষ্কার রাখার জন্য পরিছন্নতা কর্মীর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন। অফিসে কোন ব্যক্তি কোন দরকারে আসলে তাকে তার স্থান চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ও নিরাপত্তা কর্মীর। সর্বোপরি ডিসি অফিসের একটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর জুড়ে নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
সরকারি নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ কি
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরাপত্তা প্রহরে প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- নৈশ প্রহরী,
- ডে প্রহরী।
সরকারি নিরাপত্তা প্রহরী মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং সরকারি বিভিন্ন সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকেন। সরকারি নিরাপত্তা প্রহরী নির্দিষ্ট সময় পরপর বদলি হওয়ার সুযোগ পান। সরকারি নিরাপত্তা প্রহরী সরকারি সম্পদ রক্ষায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সরকারি নিরাপত্তা প্রহরীর প্রধান কাজগুলো হলো:
- সরকারি যে কোন অফিসে অযাচিত কোন ব্যক্তি ঢোকার সময় তার জাতীয় পরিচয় পত্র চেক, অযাচিত ব্যক্তির ব্যাগ এবং বহনকৃত অন্যান্য সামগ্রী চেক করার দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রহরীর।
- সরকারি অফিসের চারিদিকে সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ করে নিরবতা প্রহরী। সিসি ক্যামেরায় নজরদারি করে যে কোন অস্বাভাবিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে প্রশাসনকে জানানোর দায়িত্ব তার উপর বর্তায়।
- অফিসে যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে অফিসের সুপারভাইজার কে জানানোর দায়িত্ব নিরাপত্তা প্রহরীর।
- অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক অফিসে চারপাশ ঘুরে দেখা এবং তা অফিসে রিপোর্ট করা নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব।
যেহেতু সরকারি বিভিন্ন অফিসে প্রচুর পরিমাণে বাইরের লোকের আনাগোনা হয় তাই সরকারি নিরাপত্তা প্রহরীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়। ভিজিটরের তথ্য রেকর্ড করে রাখা সরকারি বিভিন্ন অফিসের অন্যতম কাজ। আর এই মহান দায়িত্বের প্রায় অর্ধ ভাগ দায়িত্ব পালন করেন সরকারি নিরাপত্তা প্রহরী।
স্কুলে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ কি
স্কুলে যেহেতু ছোট ছোট বাচ্চারা পড়াশোনা করে তাই তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্কুলের নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। বিদ্যালয়ের শিশুর সাথে কোন অভিভাবক আসছে, এবং শিশু কোন অভিভাবকের সাথে বের হচ্ছে তা খোঁজখবর রাখেন স্কুলের নিরাপত্তা প্রহরী।
স্কুলের খেলার মাঠ, লাইব্রেরীতে কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে কিনা এবং অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ঘটলে তা থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে রক্ষা করার দায়িত্ব ও নিরাপত্তা কর্মীর। বিদ্যালয়ে আগত সব ধরনের অতিথিদের স্বাগত জানানো, বিদ্যালয়ের সকল ধরনের সম্পত্তি রক্ষা করা, যেকোনো জরুরি অবস্থাতে বিদ্যালয়ের সকলকে সাহায্য করা বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব।
নিরাপত্তা প্রহরীর গুনাবলী কি কি
একজন নিরাপত্তা পুরোপুরি শারীরিক গুণাবলী থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবে ও একজন উত্তম ব্যক্তি হওয়া উচিত। নিরাপত্তা প্রহরীর গুণাবলী গুলো হল:
- যেকোনো সমস্যার সমাধানে দক্ষ হতে হবে,
- শারীরিকভাবে সুস্থ এবং ফিট থাকতে হবে,
- নিষ্ঠার সাথে সকল ধরনের দায়িত্ব পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে,
- দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে,
- নিরাপত্তা কর্মীকে ধৈর্যশীল হতে হবে, কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না,
- সর্বদা সতর্কভাবে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে,
- নিরাপত্তা কর্মীকে স্পষ্ট বাসি এবং ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে,
- মনোযোগী এবং শান্ত স্বভাবের হতে হবে।
নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরির যোগ্যতা
বাংলাদেশে সাধারণত এইচএসসি বা সমমান উত্তীর্ণরা সিকিউরিটি গার্ড/নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যাদের আগে থেকে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়ে থাকেন। তারপরও কিছু কিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করে থাকেন। নিরাপত্তা প্রহরী পদে যোগদানের জন্য বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। এবং শারীরিকভাবে সুস্থ, ওজন তোলার ক্ষমতা, ফিট থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
নিরাপত্তা প্রহরী সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নিরাপত্তা প্রহরী কাকে বলে? নিরাপত্তা প্রহরী কাজ কি, নিরাপত্তা প্রহরীর গুণাবলী, নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরির যোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তাই আপনি যদি এইচএসসি পাশ করে থাকেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ হন তাহলে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।
আশা করছি পুরো আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রহরী কাকে বলে এবং নিরাপত্তা প্রহরী কাজ কি সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। এমনই জটিল বিষয় গুলোকে সহজে বুজতে অনুসরণ করুন আমাদের ওয়েবসাইটটি, ধন্যবাদ।