ন্যানো টেকনোলজি কি, এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভের জন্য আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ুন। ন্যানো টেকনোলজি হল এমন এক ধরনের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি যেখানে পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানো হয়। Nano শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে nanos শব্দ থেকে যা প্রধানত গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে। এই শব্দটির আভিধানিক শব্দ হলো dwarf (বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ)।
সহজ করে বলতে গেলে, ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি বিজ্ঞান বা প্রকৌশল যা সাধারণত ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার স্কেল এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমান সময় পর্যন্ত ন্যানো টেকনোলজির দুইটি পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো হলো: ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ এবং বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র পদ্ধতি। নিচের অংশে আমরা ন্যানো টেকনোলজি কি, ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার, ন্যানো টেকনোলজি প্রকারভেদ, ন্যানো টেকনোলজির জনক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্টের বিষয়বস্তু
ন্যানো টেকনোলজি কি

ন্যানো টেকনোলজি হল একটি বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি যা আণবিক স্তরে কাজ করে থাকে। এক ন্যানোমিটার হল ১ মিটারের ১ বিলিয়ন তম অংশ। সহজ করে এভাবে দেখানো যায়: 1 nm = 10-9. দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট তৈরিতে, সৌর প্যানেল তৈরিতে, পোশাক তৈরিতে, খাদ্য সংরক্ষণ এবং উন্নত মানের কসমেটিক্স তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ন্যানোমিটার স্কেলে যে সকল টেকনোলজি যুক্ত হয় তাকে ন্যানোটেকনোলজি বলা হয়ে থাকে।
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে এই আকৃতির কোন কিছু যদি তৈরি করা হয় তখন তাকে ন্যানো পার্টিকেল বলে। সুতরাং এই টেকনোলজি প্রধানত ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার স্কেলে পরিচালিত হতে থাকে। ন্যানো টেকনোলজির কয়েকটি উদাহরণ নিচে বর্ণনা করা হলো:
- একটি খাতার পৃষ্ঠার পুরুত্ব প্রায় ১ লক্ষ ন্যানোমিটার,
- ১ ইঞ্চিতে ন্যানোমিটার এর পরিমাণ ২ কোটি ৫৪ লক্ষ,
- তুলনামূলক স্কেলে যদি হিসাব করা হয়ে থাকে একটি মার্বেল হবে ন্যানোমিটার এবং পৃথিবীর আকার হবে এক মিটার পরিমাণ।
ন্যানো টেকনোলজির জনক কে?
রিচার্ড ফাইন ম্যান ন্যানোটেকনোলজি তৈরির ধারণা প্রথম উত্থাপন করেন বলে বিবেচনা করা হয়। রিচার্ড ফাইন ম্যান তার একটি বক্তব্যে ১৯৫৯ সালে পরমাণু ও অনুকে ম্যানিপুলেট করে নতুন উপাদান তৈরি করা যায় বলে উপস্থিত সবাইকে ধারণা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে জাপানের একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ন্যানো টেকনোলজি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এ বিজ্ঞানের নাম ছিল নোরিও তানগুচি।
যদি ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ক প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন রিচার্ড ফাইন ম্যান। এদিক থেকে তাকেই ন্যানোটেকনোলজির জনক বলা হয়। Richard Feynman যে বক্তৃতায় ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ক ধারণা প্রদান করেছিলেন সে অনুষ্ঠানের নাম ছিল “There are Plenty of Room at the Bottom ”. প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাব্য বর্ণনা তিনি এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করেছিলেন।
ন্যানো টেকনোলজি কত প্রকার ও কি কি
ন্যানো টেকনোলজিকে সাধারণত প্রয়োগের ক্ষেত্র অনুযায়ী এবং নকশার ক্ষেত্রে অনুযায়ী বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত প্রয়োগের ক্ষেত্র অনুযায়ী ন্যানো টেকনোলজির কয়েকটি ভাগ নিচে প্রদান করা হলো:
১. ন্যানো ইলেকট্রনিক্স
বর্তমানে ন্যানো ট্রানজিটর এবং ন্যানো ওয়্যার এর মত ইলেকট্রনিক্স উপাদান ব্যবহার করে আরো উন্নত ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করা হচ্ছে।
২. ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস
ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি পদার্থকে ন্যানো ম্যাটারিয়ালস বলা হয়ে থাকে। ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস প্রধানত উচ্চতা শোষণ করতে পারে এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিত। ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এটি হালকা ও নমনীয় হওয়ার পাশাপাশি উচ্চ শক্তি সমৃদ্ধ হয়।
৩. ন্যানো মেডিসিন
বিজ্ঞানের এই শাখায় ন্যানো আকারের কনা ব্যবহার করা হয় যা সরাসরি কোষের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন রোগের জীবাণু এবং ক্যান্সার কোষ কে ধ্বংস করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
৪. ন্যানো এনার্জি
ন্যানো সৌর কোষ, ন্যানো ব্যাটারি, ন্যানো থার্মো ইলেকট্রনিক জেনারেটর ইত্যাদি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স এবং পরিবহন ক্ষেত্রে ন্যানো এনার্জি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তি তৈরীর অন্যতম উৎস হলো ন্যানোটেকনোলজি। নবায়নযোগ্য শক্তি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নকশার ক্ষেত্র অনুযায়ী ন্যানো টেকনোলজি টপ – ডাউন, বটম-আপ স্কেলে তৈরি করা হয়ে থাকে। টপ ডাউন পদ্ধতিতে বৃহৎ স্কেলের উপকরণ থেকে ন্যানো-স্কেলের কাঠামো তৈরি করা হয়। এবং বটম-আপ পদ্ধতিতে পরমাণু বা অণু স্তরে ন্যানো-স্কেলের কাঠামো তৈরি করা হয়।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টর ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। নিচে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১) ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরি
ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে প্রোডাক্টের আকার ছোটো হচ্ছে এবং ওজনে হালকা হচ্ছে। ন্যানো প্রসেসর এর কারণে কম্পিউটারের গতি বাড়ছে এবং বিদ্যুৎ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয় হচ্ছে। ন্যানো ব্যাটারি দিয়ে বিভিন্ন ডিভাইস অনেক সময় ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন ডিভাইস এর উন্নত ডিসপ্লে নিশ্চিত করার জন্য ন্যানোটেকনোলজি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া যেসব ডিভাইস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করা সম্ভব ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে।
২) খাদ্য শিল্পে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
ন্যানো টেকনোলজির কারণে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং ব্যবস্থা দিন দিন আরো উন্নত হচ্ছে। খাদ্যের স্বাদ, রঙ, গন্ধ অক্ষুন্ন রাখতে, খাদ্যের পুষ্টিগুণ বাড়াতে, খাদ্যের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ সনাক্ত করতে, খাদ্যকে দীর্ঘদিন ফ্রেশ রাখতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত বিশ্বের কৃষকরা ন্যানো ফার্টিলাইজার এবং পেস্টিসাইড ব্যবহার করছেন। ফসল কে রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখতে ও এই প্রযুক্তি কার্যকর।
৩) জ্বালানি ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার
নতুন জ্বালানি যেমন: হাইড্রোজেন উৎপাদন করা সম্ভব ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে। ন্যানো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে জ্বালানি সঞ্চয় করা যায়। জ্বালানি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ন্যানো ক্যাটালিস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়োমাস থেকে ইথানল উৎপাদন করা হচ্ছে। ন্যানো পার্টি কল ব্যবহার করে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং চার্জ হওয়ার গতি বাড়ানো সম্ভব। সৌর কোষের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য ন্যানো পার্টি কল খুবই কার্যকর।
৪) খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
ব্যাডমিন্টন, গলফ ক্লাব এর মত ধাতব বস্তু আরও শক্তিশালী করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। খেলোয়াড়রা যাতে খেলাধুলা করার সময় স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন সেই চিন্তা মাথায় রেখে খুব হালকা এবং টেকসই খেলার সরঞ্জাম তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। খেলোয়াড়দের জুতার গ্রিল এবং স্পেশাল পোশাক তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্র ফুটবল, বাস্কেটবল, সাইক্লিং, সাঁতার ইত্যাদি খেলায় যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় তা অধিকাংশই ন্যানোটেকনোলজি দিয়ে তৈরি।
৫) চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার
ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত, ডায়াগনস্টিক, ক্যান্সার চিকিৎসায় ন্যানোটেকনোলজি ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ক্যান্সার কোষ কে সরাসরি লক্ষ্য করে কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যাতে কমানো যায় সেজন্য ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। শরীরের অভ্যন্তরের ছবি তুলে রোগ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন প্রযুক্তি হলো ন্যানোটেকনোলজি। এছাড়া নতুন নতুন ওষুধ তৈরিতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
৬) কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করলে তা খুবই হালকা এবং দৃঢ় প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সেন্সর বসানো যায়, এতে করে পরবর্তীতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করলে তা দেখতে বাস্তবসম্মত দেখায় এবং শরীরের সাথে খুব দ্রুত মিশে যায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বহন করতে যে সমস্যা হয় তা দূর করতে ন্যানোটেকনোলজি খুবই কার্যকর।
৭) বস্ত্র তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি
কাপড় টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে, হালকা এবং বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে এমন পোশাক তৈরিতে নানা টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। পোশাক ওয়াটারপ্রুফ করার জন্য, স্পোর্টস ওয়্যার তৈরিতে, মেডিকেল কাপড় এবং সামরিক পোশাক তৈরিতেও ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
৮) পরিবেশ দূষণ রোধে ন্যানোটেকনোলজি
শিল্প কারখানা থেকে যে ক্ষতিকর বর্জ্য উৎপন্ন হয় তাও ক্ষতিকর বর্জ্যে রূপান্তর করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি কার্যকর। ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যকে ন্যানো পার্টিকেল এর মাধ্যমে অক্ষতিকর বর্জ্যে পরিণত করা সম্ভব। এছাড়া যানবাহন থেকে উৎপন্ন হওয়া কালো ধোয়া ন্যানো পার্টিকেলের সহায়তায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণমূক্ত করা সম্ভব। এতে করে ধীরে ধীরে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
৯) যোগাযোগের ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজি
মেমোরি চিপ গুলোতে ডেটা স্টোরেজ, দ্রুততম প্রসেসিং, ন্যানোম্যাটেরিয়াল দিয়ে হার্ডডিস্ক তৈরি এবং দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড নিশ্চিত করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। কম জ্বালানি চাহিদা রয়েছে এমন নতুন গাড়ি তৈরি করতে বিভিন্ন গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেকনোলজি ব্যবহার করছে।
১০) মহাকাশ অভিযানে ন্যানোটেকনোলজি
ন্যানো সেন্সর ব্যবহার করে মহাকাশের পরিবেশের তথ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করার জন্য মহাকাশ চারিরা ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করছেন। সামগ্রিক উপগ্রহ এবং অস্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি করতে এ প্রযুক্তি কার্যকর। মহাকাশচারীদের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে যাতে করে সরঞ্জাম গুলো খুবই হালকা এবং মজবুত হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীর অধিকাংশ প্রযুক্তি এখন ন্যানো টেকনোলজির উপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আপনি আমি সবাই কোন না কোন ভাবে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করছি।
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা

নানো টেকনোলজির বিভিন্ন রকম সুবিধা আমরা ইতোমধ্যেই ভোগ করছি। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
- ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদি তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে কম খরচে শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
- পরিবেশের প্রধান দুটি উপাদান বায়ু এবং পানি দূষণ প্রতিরোধে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
- ইলেকট্রনিক্স শিল্পে বিপ্লবিক পরিবর্তনের প্রধান উপাদান গুলো হল ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। এগুলো তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে।
- প্রানঘাতী রোগ ক্যান্সার ছাড়াও মস্তিষ্কের মারাত্মক রোগ গুলো নিরাময়ে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
- বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী টেকসই, হালকা এবং দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।
- খাদ্য উৎপাদন, প্যাকেজিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াও খাদ্যের গুনাগুন অক্ষুন্ন রাখতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
- নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদনে উন্নতি আনা সম্ভব ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে।
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে ন্যানো টেকনোলজি কার্যকর।
উপরিউক্ত সুবিধাগুলো ছাড়াও ন্যানোটেকনোলজি আরও বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহাকাশচারীরা তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছেন। সর্বোপরি খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, পোশাক এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা

ন্যানো টেকনোলজির নানাবিধ সুবিধা থাকলেও এর কিছু কিছু অসুবিধা রয়েছে।
- ন্যানো কোন পদার্থ যদি শ্বাস প্রশ্বাস এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে তাহলে আমাদের শরীরের লিভার এবং মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণের জন্য ন্যানোটেকনোলজি দায়ী।
- ন্যানোটেকনোলজি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের টেকনোলজি সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না।
- পর্যাপ্ত জ্ঞান না নিয়ে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করলে তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর হতে পারে।
- ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি করা যায়। যা যা সাধারণ মানুষের জন্য আতংকের বিষয়।
- ন্যানোটেকনোলজি সম্পূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করলে আণবিক শক্তি সহজ লভ্য হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে ন্যানো টেকনোলজির ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহারের প্রধান অন্তরায় হলো ন্যানোটেকনোলজি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া বাংলাদেশ ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে কিছুটা হুমকির মুখে পড়তে পারে। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা হলো:
সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি না করে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করলে তা অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি স্বরূপ। দক্ষ বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী ছাড়া ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের দক্ষ বিজ্ঞানী এর অভাব রয়েছে এবং বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করলে বিভিন্ন দ্রব্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যাবে না। সর্বোপরি একটি দেশের জনগণ যদি প্রযুক্তির নিয়ে সচেতন না থাকে তাহলে সে প্রযুক্তি দেশের উন্নয়নে আসে না। তাই ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কে অবশ্যই দেশের জনগণকে সচেতন করতে হবে।
আরো পড়ুন
ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
ন্যানো টেকনোলজি আকৃতি কত?
১ ন্যানোমিটার হল ১ মিটারের ১ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ।
ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে তৈরি বস্তুকে কি বলে?
ন্যানো টেকনোলজি মাধ্যমে তৈরি বস্তুকে ন্যানোটেক বলা হয়। ন্যানোটেক খুবই সূক্ষ্ম বিষয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবং এগুলো আকারে খুবই ছোট আকৃতির হয়।
ন্যানো পদার্থ বলতে কি বুঝায়?
ন্যানো পদার্থ বলতে বোঝায় এমন একটি পদার্থ যা অতি ক্ষুদ্র কণা নিয়ে কাজ করে।
ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের মতামত
তথ্য প্রযুক্তি আধুনিকায়ণের এই যুগে ন্যানো টেকনোলজি কি, নানা টেকনোলজির ব্যবহার এবং সুবিধা, ন্যানো প্রযুক্তি কি, ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা, বাংলাদেশের ন্যানো টেকনোলজির ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা উপরিউক্ত বিষয় সমূহ নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ক আর কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।।