আধুনিক শিক্ষায় প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি দরকারি। একটি জাতির উন্নত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি জরুরি।
প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ শিক্ষা ব্যবস্থা কে উন্নিত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। বর্তমান আধুনি পৃথিবীতে প্রায় সকল দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকে।
মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর ও বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি শিক্ষা অঙ্গন কে নিয়ে গেছে উন্নতির শিখরে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠদান অনেক বেশি সহজ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের জটিল সব সমস্যার সমাধান কম্পিউটার ব্যবহার করে অল্প সময়ে সমাধান করা যাচ্ছে।
আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে জানবো শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে। যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তবে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা সকল দিক গুলো বিস্তারিত নিচে তুলে ধরলাম –
পোস্টের বিষয়বস্তু
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার সকল ক্ষেত্রে দেখা যায়। স্মার্ট বোর্ড থেকে শুরু করে কম্পিউটারের মাধ্যমে স্মার্ট ল্যাব সিস্টেম। প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠদান শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা কে আরো বেশি মজাদার করে তোলে। নিচে আমরা জানবো শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করা হয় –
১. স্মার্ট বোর্ড
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শ্রেনীকক্ষে স্মার্ট বোর্ড ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে লেখালেখির পাশাপাশি ইমেজ ও প্রেজেন্টেসন প্রদর্শন করা যায়। এই প্রযুক্তির ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক রুপ বয়ে এনেছে। অন্যদিকে পাঠদান কে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে।
২. ই-বুকস
ই-বুকস এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে যে কোনো ধরণের বই যে কোনো স্থানে বসে পড়তে পারে। এই প্রযুক্তির ফলে শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না বরং ল্যাপটপ এর মাধ্যমে সকল বই পড়ার সুজোগ পায়।
৩. ই-লার্নিং প্লাটফর্ম
প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার আরো একটি প্রযুক্তি হলো ই-লার্নিং প্লাটফর্ম গুলো। এসকল প্লাটফর্ম গুলো থেকে ভালো মানের শিক্ষক এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করার সুজোগ তৈরি করে দিয়েছে ই-লার্নিং প্লাটফর্ম গুলো। কয়েকটি সেরা ই-লার্নিং প্লাটফর্ম হলো – Khan Academy, Coursera, Udamy, 10 Minute School ইত্যাদি।
৪. ইন্টারনেট
ইন্টারনেট সেবা শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যে কোনো অধ্যায়ের নির্দিষ্ট সমাধান কয়েক মিনিটে বের করে ফেলতে পারছে। ইন্টারনেট হলো তথ্যের ভান্ডার। রিসার্চ এর জন্য আন্তর্জাতিক লাইব্রেরি থেকে যে কোনো বই অথবা রিসার্চ পেপার পড়তে পারে।
এ ছাড়াও অনলাইনে ক্লাস যা বাসায় বসেই প্রতিষ্ঠানে যাওয়া ছাড়া ক্লাস করার সুজোগ তৈরি করে দিয়েছে। বলা যায় ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থা ইন্টারনেট ভিত্তিক ভাবেই গড়ে উঠবে।
৫. অডিও বুক
শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহুত একটি প্রযুক্তি হলো অডিও বুক। অনেক বড় উপন্যাস কিংবা একাডেমিক বই যদি আপনার পড়তে ভালো না লাগে তাহলে অডিও বুক ডাউনলোড করে যে কোনো স্থানে বসে সেটা শুনতে পারবেন। এর ফলে পিডিএফ ও বই রাখার প্রয়োজনীয়তা অনেক কমেছে।
৬. আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা AI প্রযুক্তি
বর্তমান সময়ে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। AI এর মাধ্যমে খুব সহজেই লেটার, ইমেইল, সিভি, কোডিং ইত্যাদি সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে অংকের জটিল সব সমস্যা সমাধানেও পারদর্শী কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।
৭. শিক্ষামূলক ভিডিও কনটেন্ট
শিক্ষামূলক ভিডিও কন্টেন্ট গুলো শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে থাকে। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ইউটিউব। এখান থেকে ফ্রি তে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষকদের লেকচার শুনতে পারে। পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো একজনের লেকচার নিজেদের একাডেমিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারে।
৮. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা সংক্ষেপে VR বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি। শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরণের ইতিহাস কে সুন্দর ভাবে বুঝাতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
৯. ক্লাউড ড্রাইভ
অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্য সেভ করে রাখতে পারে এজন্য প্রচুর পরিমানে ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ রয়েছে। যেমন – গুগল ড্রাইভ, মিডিয়া ফায়ার ইত্যাদি। এখানে এসাইনমেন্ট, রিসার্চ পেপারস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো সংরক্ষন করে রাখা যায়।
১০. ফলাফল প্রকাশ ও যাচাইকরণ
ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহারের পূর্বে নিউজ পত্রিকায় বোর্ড পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হতো। যেটা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ভোগান্তির ছিল। তবে বর্তমানে আধুনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলাফলা প্রকাশ করা হয় অনলাইনে ও এসএমএস এর মাধ্যমে। যা একদিকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমিয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছে।
পরিক্ষার খাতা যাচাই করন এর ক্ষেত্রে OMR প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে কোনো নির্দিষ্ট ভাবে খাতা শনাক্ত করা যাবে না প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া। তাই পরিক্ষার খাতা কোন শিক্ষার্থীর সেটা খাতা দেখার শিক্ষক জানতে পারবেন না। শুধু মাত্র ফলাফল এর সময় প্রযুক্তির মাধ্যমে খাতা নিশ্চিত করা হয়। ফলাফল প্রকাশে বৈষম্য দূরিকরণ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে এই প্রযুক্তি।
আরো পড়ুন
এ ছাড়াও প্রযুক্তি অনেক ভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। দিন দিন প্রযুক্তি যেমন তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে এর ব্যবহার ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তি কি শুধু আমাদের সুবিধা দিয়ে থাকে নাকি রয়েছে এর অসুবিধার দিক? এই প্রশ্নের উত্তর চলুন নিচে জেনে আসি প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের অনেক সুবিধার দিক রয়েছে এখানে আমরা কয়েকটি দিলাম –
- প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
- প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো স্থানে বসে উচ্চশিক্ষা লাভ করা সম্ভব।
- ভিডিও কনটেন্ট এর মাধ্যমে যে কোনো ধরণের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।
- অনলাইনে প্রচুর পরিমানে শিক্ষক রয়েছে। যাদের থেকে জ্ঞানার্জন করা যায়।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই যে কোনো তথ্য খুজে বের করা যায়।
- একাডেমিক যে কোনো কুইজে অংশগ্রহন করা যায়।
- আন্তর্জাতিক শিক্ষামূলক কম্পিটসনে দেশে বসেই অংশগ্রহন করা যায়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের অসুবিধা
প্রযুক্তির সুবিধা শিক্ষা ক্ষেত্রে থাকলে রয়েছে অনেক অসুবিধার দিক। চলুন জেনে নেই অসুবিধার দিক গুলো সম্পর্কে –
- অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ইন্টারনেট ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কারনে ক্রিয়েটিভ চিন্তা ধারা বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
- পড়াশোনার ক্ষেত্র অনেক সহজ হওয়ার কারনে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমেছে।
- শিক্ষার্থীদের মাঝে অলসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- প্রশ্নফাস সহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
- ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার পরিক্ষায় নকল করার প্রবণতা বাড়ছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আর্টিকেলে আমরা জানলাম প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কে উন্নত করে তুলছে। দিন দিন নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিস্কার হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই শুধু মাত্র প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠদান সহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনেক সুবিধা হলেও পূর্বের তুলনায় কর্মদক্ষতা অনেক কমেছে। আগামীর পৃথীবিতে শুধু মাত্র প্রযুক্তি নির্ভর হবে, তবে আপনার কি মনে হয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি নাকি অবনতি হবে? আমাদের মন্তব্য করে আপনার মতামত জানাতে পারেন।
এরকম নিত্যনতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। এবং প্রযুক্তির সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান। সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।