বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা করার জন্য জানতে হবে সাইবার অপরাধ কি? সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি এ সম্পর্কে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন কোন না কোনভাবে উপকৃত হচ্ছি।
আবার এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই সাইবার অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। সাইবার অপরাধ সাধারণত সংঘটিত হয় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সাইবার স্পেস, ইমেইল ও ওয়েবসাইট সহ আরো বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে। সাইবার অপরাধ গুলোর মধ্যে তথ্য চুরি হওয়া, অনুমতি ছাড়া অন্যের একাউন্ট এর অপব্যবহার, সাইবার বুলিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার এট্যাক, ডাটা ধ্বংস করা, সাইবার স্পাইনেজ, সাইবার স্টাল্কিং, সাইবার সেক্স ট্রাফিক ইত্যাদি সংগঠিত হয়ে থাকে। সাইবার আর্থিক অপরাধ, সাইবার চাঁদাবাজি, সাইবার জালিয়াতি, সাইবার সন্ত্রাস, সাইবার যুদ্ধ ইত্যাদিও সাইবার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।
আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা সাইবার অপরাধ কি? সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্টের বিষয়বস্তু
সাইবার অপরাধ কি
সাইবার অপরাধ বা cyber crime বলতে বোঝায় অনলাইনে প্রাথমিকভাবে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয় সেগুলোকে। সহজ কথায় বলতে গেলে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস কে লক্ষ্য করে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয় তাকে সাইবার অপরাধ বলা হয়। সাইবার অপরাধ এর মাধ্যমে অনেক সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং অপরাধকে সাইবার স্পেসে স্থানান্তরিত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের জন্য সাইবার অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত কারণে ও সাইবার অপরাধ ঘটতে দেখা যায়।
সাইবার অপরাধী কারা
সাইবার অপরাধ সাধারণত ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সংঘটিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের বড় বড় ওয়েবসাইট হ্যাকিং এর ঘটনাও ঘটে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় হ্যাকারদের বড় কিছু টিম রয়েছে যারা এডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার করে থাকে। এরা হ্যাকার হিসেবে খুবই দক্ষ, অন্যদিকে যারা নতুন হ্যাকিং প্র্যাকটিস করছে তারা ছোট ছোট অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে। সাইবার অপরাধীদের নিরাপদ জগৎ হিসেবে “ডার্ক ওয়েব” পরিচিত।
তবে সাইবার অপরাধী ছাড়াও ‘হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার’ রয়েছে যারা প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষতি করার জন্য যেসব হ্যাকাররা কাজ করে তাদেরকে ‘ব্ল্যাক হ্যাক হ্যাট হ্যাকার’ বা সাইবার অপরাধী বলা যেতে পারে। সাইবার অপরাধীরা তথ্য হ্যাক করা ছাড়াও অনলাইনে অনেক সময় অবৈধ ব্যবসা বা ড্রাগ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।
সাইবার অপরাধীরা নিন্মোক্ত ধরনের হতে পারে:
- ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
- সাইবারস্টাকার
- সাইবার সন্ত্রাসী
- স্ক্যামার।
সাইবার অপরাধীদের প্রকারভেদ উপরিউক্ত ধরনের হয়ে থাকে।
সাইবার অপরাধের প্রকারভেদ
সাইবার অপরাধের বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
- জালিয়াতি,
- সাইবার সন্ত্রাস,
- আর্থিক অপরাধ,
- সাইবার চাঁদাবাজি,
- ফিশিং এট্যাক,
- হ্যাকিং,
- সাইবার যুদ্ধ,
- সাইবার বুলিং,
- ম্যালওয়্যার এট্যাক,
- ফিশিং এট্যাক ইত্যাদি।
১. সাইবার সন্ত্রাস কি
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপপ্রচার বা ভয়ভীতি দেখানো কে সাইবার সন্ত্রাস বলা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সাইবার টেরোরিস্ট যারা রয়েছেন তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সিস্টেম এবং নিরাপত্তা কার্যক্রম এর মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করে দিতে পারে। তাছাড়া এসব তথ্য নষ্ট করে দেওয়ার আগে দেশের বাইরে পাচার করে দেওয়ার মতো অপকর্ম ও সাইবার সন্ত্রাস এর অন্তর্গত।
২. সাইবার চাঁদাবাজি কি
যখন কোন হ্যাকার একটি ওয়েবসাইট, ই-মেইল সার্ভার, বা কম্পিউটার সিস্টেম এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সার্ভার ডাউন করে দেয় তখন এই হামলা বন্ধ করার জন্য তারা বিনিময়ে অর্থ দাবি করে। একেই সাধারণত সাইবার চাঁদাবাজি বলা হয়।
৩. সাইবার আর্থিক অপরাধ কি
আর্থিক লাভের আশায় যখন কোন অপরাধী ব্যাংক হ্যাকিং, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং, ই-কমার্স ওয়েবসাইটে বা সার্ভার হ্যাকিং এর মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তখন তাকে সাইবার আর্থিক অপরাধ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যক্তিগত তথ্য চুরির জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধনের জন্য সাইবার আর্থিক অপরাধ সংগঠিত হয়।
৪. ম্যালওয়্যার আক্রমণ কি
ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার হল একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার যা আপনার অনুমতি ছাড়াই কাজ করে এবং গোপন তথ্য চুরি করে, ডিভাইসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া ছাড়াও ডাটা নষ্ট করে ফেলতে পারে। ভাইরাস, র্যানসমওয়্যার, স্পাইওয়্যার, ওয়র্মস ইত্যাদি ডিভাইসের সুরক্ষা বিপন্ন করতে পারে।
৫. হ্যাকিং কি
যখন একটি সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ডিভাইস বা অ্যাপ্লিকেশনের এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্য কোন ডিভাইসের মালিকের অনুমতি ব্যতীত নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয় তখন তাকে হ্যাকিং বলা হয়। বর্তমানে হ্যাকাররা অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার করে জাতীয় পর্যায়ের ওয়েবসাইট ও হ্যাক করতে সমর্থ হচ্ছে।
৬. সাইবার যুদ্ধ কি
যখন গুপ্তচর দ্বারা আর্থিক প্রতারণা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বা অন্য কোন রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কোন বিষয় বা সাইবার স্পেসে আক্রমণ করা হয় তখন তাকে সাইবার যুদ্ধ বলা হয়। এ অবস্থায় একটি দেশের গোপন নথিপত্র প্রকাশিত হয় যা একটা অদৃশ্য যুদ্ধ হিসেবে সংগঠিত হতে থাকে। সাইবার যুদ্ধ চলাকালীন সামরিক এবং আর্থিক দিক ছাড়াও জনগণের জীবনমানের নিরাপত্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
সাইবার অপরাধ ব্যক্তিগত পর্যায়ে, প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে, সরকারি পর্যায়ে প্রতিরোধ করা যায়। নিচে আমরা ধাপে ধাপে সাইবার অপরাধ (cyber crime) প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
ব্যক্তিগত পর্যায়ের সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য প্রথমত সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরী। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সচেতন উপায়ে করলেই সাইবার অপরাধ অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। সচেতনতা অবলম্বন ছাড়া সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে আপনি আরো যা যা করতে পারেন তা হল:
Strong পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
অনলাইনে আপনার যেসব অ্যাকাউন্টগুলো রয়েছে তার নিরাপত্তার জন্য একটি স্ট্রং এবং দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড টি যাতে ইউনিক এবং একটু কঠিন ধরনের হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। একটি স্ট্রং পাসওয়ার্ড আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে।
সন্দেহজনক কার্যকলাপ রিপোর্ট করুন
ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় আপনি যদি অযৌক্তিক কিছু পরিলক্ষিত করেন বা সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ে তাহলে তা যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষকে জানানোর চেষ্টা করুন। সন্দেহজনক কোন লিংকে কোনভাবেই ক্লিক করবেন না।
সকল ডেটার ব্যাকআপ রাখুন
অনলাইনে আপনি প্রতিনিয়ত যেসব কার্যকলাপ করছেন তা ব্যাকআপ রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনীয় সকল ডাটা ব্যাকআপ থাকলে অ্যাকাউন্ট কোনরকম ক্ষতির সম্মুখীন হলেও আপনি ডাটা গুলো পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন।
পাবলিক ওয়াইফাই এড়িয়ে চলুন
জনবহুল স্থানে যেসব পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা হয় সেখান থেকেও অনেকেই মোবাইলে ওয়াইফাই কানেক্ট করে নেয়। এ অবস্থায় ওই স্থানে যদি কোন হ্যাকার থাকে তাহলে সহজেই আপনার স্মার্ট ফোনে থাকা তথ্যগুলো হ্যাক করে নিতে পারে। তাই পাবলিক ওয়াইফাই এড়িয়ে চলুন।
তথ্য শেয়ার করতে সাবধানতা অবলম্বন করুন
অনলাইনে যে কোন তথ্য বা ছবি শেয়ার করার আগে চিন্তা করুন এই তথ্য হ্যাকারের কোনরকম উপকারে আসতে পারে কিনা। যদি আপনার মনে হয় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারকে সাহায্য করতে পারে তাহলে সেসব তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন
অপারেটিং সিস্টেম, অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অন্যান্য সফ্টওয়্যার নিয়মিত আপডেট করলে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি অনেক অংশে কমে আসে। তাই সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন।
লিংক ক্লিক করতে সচেতনতা অবলম্বন করুন
অপরিচিত কোন ব্যক্তি যদি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার কোন অ্যাকাউন্ট অহেতুক কোন লিংক পাঠিয়ে থাকেন তাহলে সেই লিংকে ক্লিক করবেন না। লিংক এর পাশাপাশি অপরিচিত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া ইমেইল এ ক্লিক করাও বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।
২. প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায় সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ কিছুটা ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। চলুন প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কিভাবে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
সাইবার নিরাপত্তা অডিট পরিচালনা করুন
প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ডিজিটাল সম্পদের নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য সাইবার নিরাপত্তা অডিট পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সাইবার নিরাপত্তা অডিট পরিচালনা করার ফলে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়, তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়, সহজেই ঝুঁকি শনাক্ত করা যায়। সাইবার নিরাপত্তা অডিট পরিচালনা করলে যা যা হয় তা হল:
- ডেটা ব্যাকআপ পরীক্ষা করা হয়,
- সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার পরীক্ষা করা হয়,
- কর্মচারীদের সচেতনতা পরীক্ষা করা হয়,
- প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নীতি পর্যালোচনা করা হয়,
- নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং করা হয়।
ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করুন
বর্তমান যুগে প্রত্যেকটি ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা জরুরি। ডাটা সুরক্ষা ব্যবহার বাস্তবায়ন করার কৌশল গুলো হল:
- Two factor authentication পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করুন,
- ইউনিক এবং দীর্ঘ একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন,
- vpn ব্যবহার করতে হবে,
- ফায়ারওয়াল ব্যবহার নিশ্চিত করুন,
- নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন,
- ডেটার লিংক মনিটরিং করুন,
- ডেটা এনক্রিপশন করে রাখুন।
ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানগুলোর খ্যাতি বৃদ্ধি করতে, অপচয় কমিয়ে আনতে, আইনি জটিলতা এড়িয়ে চলতে, গ্রাহকের আস্থা অর্জনে ডেটা সুরক্ষা ব্যবহার বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরী।
সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন করুন
যেকোনো ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান এর সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন করা একান্ত জরুরী। সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা তথ্য চুরি, ডেটা লিক হওয়া এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা গুলো হল:
- আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে,
- কর্মচারীরা জবাবদিহিতায় বাধ্য থাকে,
- প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান সম্পদ সুরক্ষিত থাকে,
- ব্রান্ড ইমেজ রক্ষা করে।
সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালায় পাসওয়ার্ড এর নিরাপত্তা, ডিভাইস এর নিরাপত্তা, ইমেইল এর নিরাপত্তা জনিত নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করা হয়। সাইবার হামলা হলে করণীয় কি তা সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালায় সন্নিবেশিত থাকে।
নিয়মিত সিস্টেম আপডেট করুন
সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে আপনার ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান সিস্টেম নিয়মিত আপডেট রাখার চেষ্টা করুন।
ডাটা ব্যাকআপ নিশ্চিত করুন
আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আলাদের স্থানে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে সচেতন হন। এতে করে সাইবার অপরাধ সংগঠিত হলেও আপনার তথ্য খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না।
৩. সরকারি পর্যায়ে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উপায়
সরকারি উপায়ে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য শাস্তির জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। এতে করে সাইবার অপরাধ অনেকটাই কমে আসবে।
সাইবার অপরাধের শাস্তি কি
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের শাস্তি গুলো হলো:
- কম্পিউটার সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা সহ ৭ বছরের কারাদণ্ড,
- কম্পিউটার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করলে বা ধ্বংস করলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা,
- অনলাইনে বিদ্বেষ মূলক বক্তব্য প্রদান করলে ও ভুয়া খবর ছড়ালে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৭ বছরের কারাদণ্ড,
- অনলাইনে শিশুকে যৌন নির্যাতন করা হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা,
- ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ডাটা ডিলিট করলে ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস চুরি করলে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং সাত বছরের কারাদণ্ড।
সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০১৫ অনুযায়ী:
- জাতীয় পর্যায়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করলে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের কারাদণ্ড,
- ইলেকট্রনিক ডাটা বিক্রি করলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং সাত বছরের কারাদণ্ড,
- ইলেকট্রনিক ডাটা চুরি করলে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের কারাদণ্ড,
- ইলেকট্রনিক ডাটা সমূহ ধ্বংস করলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার পাশাপাশি সাত বছরের কারাদণ্ড।
সাইবার অপরাধের শিকার হলে করণীয়
সাইবার অপরাধের মতো বড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য জেনে রাখতে হবে সাইবার অপরাধের শিকার হলে করণীয় কি কি সে সম্পর্কে। সাইবার অপরাধের শিকার হলে প্রথমত আপনাকে সব ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যেসব তথ্য আপনি সংগ্রহ করবেন তা হল:
- যদি কোন ভুয়া কল আসে তাহলে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করুন,
- নিজের আইপি এড্রেস সংগ্রহের তালিকায় রাখুন,
- যদি কোন লিংক আসে তা সংগ্রহ করুন,
- আইডির স্ক্রিনশট এবং পোস্টের তারিখ সংগ্রহ করুন,
- যদি কোন ব্যক্তিকে সন্দেহ হয় তাহলে তার নাম এবং প্রোফাইল লিংক যদি থাকে তা সংগ্রহ করুন,
- যদি অডিও বা ভিডিও কোন ফাইল আপনার কাছে থাকে তা সংগ্রহ করুন,
তথ্য সংগ্রহ করার সময় যখন স্ক্রিনশট নিবেন তখন যাতে URL দেখা যায় তা নিশ্চিত করুন। কারণ ইউ আর এল আপনার মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাইবার অপরাধের শিকার হলে সরাসরি উপস্থিত হয়ে, ফোনে, অ্যাপস এর মাধ্যমে এবং ইমেইলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ জানানো যায়।
আরো পড়ুন
সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
ই কমার্স সাইবার ক্রাইম কি?
যখন কোন সাইবার অপরাধী অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন তাকে ই-কমার্স সাইবার ক্রাইম বলে।
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় কি?
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখুন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, স্মার্টফোন ব্যবহারের সচেতন হোন, সাইবার বুলিং রিপোর্ট করুন।
সাইবার স্টকিং বলতে কি বুঝায়?
সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেল বা টেক্সট মেসেজিং এর মাধ্যমে যখন কোন ব্যক্তিকে স্টক করা হয় তখন তাকে সাইবার স্টকিং বলা হয়।
সাইবার অপরাধ সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা সাইবার অপরাধ কি? সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাইবার অপরাধ সম্পর্কে যদি আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।