নদীমাতৃক দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ১০ টি নদীর নাম জেনে রাখা জরুরী। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের শাখা প্রশাখা সহ নদ-নদী রয়েছে প্রায় ১,০০৮ টি। জালের মত বিস্তীর্ণ এলাকার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই নদ
নদী দখল করে রয়েছে প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৩ সালের গবেষণায় প্রকাশ করে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নদনদীর সংখ্যা ছিল মোট ৩১০টি। ২০২৪ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০৮ টি। নদীমাতৃক এই দেশের সবচেয়ে বড় নদী গুলোর নাম হল: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, পশুর, সাঙ্গু, শীতলক্ষ্যা, গোমতী ইত্যাদি। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ১০ টি নদীর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পোস্টের বিষয়বস্তু
নদী কাকে বলে
নদী বলতে সাধারণত বোঝায় মিষ্টি জলের এক প্রাকৃতিক জলধারা। প্রাকৃতিক উপায়ে ঝরনাধারা, বরফগলিত স্রোতধারা থেকে পরিবর্তন হয়ে পানি নদী পথের মাধ্যমে প্রবাহিত হতে থাকে। নদী পথ ধরে প্রবাহিত হওয়ার পর এই পানি সাগর-মহাসাগর, হ্রদ, জলাশয় এ পতিত হয়। তবে নদীর পানি যে সর্বদা সাগর-মহাসাগর,হ্রদ,বা জলাশয়ে পতিত হবে বিষয়টা তা নয়।
সাগর, মহাসাগর পর্যন্ত নদীর পানি পৌঁছানোর আগেই অনেক নদী শুকিয়ে যায়। নদী তার নিজস্ব গঠন অনুযায়ী শাখা নদী বা উপনদী নামে পরিচিত হয়ে থাকে। M.Moriswa এর মতে, খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা কে নদী বলা যেতে পারে। নদী শব্দের সমার্থক শব্দগুলো হল: তটিনী, তরঙ্গিনী, সরিৎ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ১০ টি নদীর নাম
কিছুক্ষণ আগেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীপথ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার ফলে নদীর ভূমিকা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ বিভিন্ন কাজে নদীপথ ই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শাখা প্রশাখা সহ নদ-নদী রয়েছে প্রায় ১,০০৮ টি। তবে আমরা আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ১০ টি নদীর নাম এবং নদীগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো। চলুন এক নজরে দেখে নেই বাংলাদেশের দশটি নদীর নাম:
- পদ্মা,
- মেঘনা,
- যমুনা,
- কর্ণফুলী,
- ব্রহ্মপুত্র,
- তিস্তা,
- শীতলক্ষ্যা,
- গোমতী,
- সাঙ্গু,
- মাতামুহুরী।
১) পদ্মা নদী
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান নদী হিসেবে পদ্মা নদী পরিচিত। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই নদীটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা। নদী রক্ষা কমিশন রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশের পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার এবং নদীটির প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জেলা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। জেলাগুলোর নাম হল:
- রাজবাড়ী,
- ঢাকা,
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
- মুন্সিগঞ্জ,
- শরীয়তপুর,
- মাদারীপুর,
- ফরিদপুর ,
- মানিকগঞ্জ,
- রাজশাহী,
- নাটোর,
- পাবনা,
- কুষ্টিয়া,
- চাঁদপুর।
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর নদীটি সরাসরি রাজশাহী জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়। নদীটি ভারতের হুগলির দিকে ভাগীরথী নামে প্রবাহিত হয়। নদীটি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর ২,২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে চাঁদপুর জেলায় ঢুকে সরাসরি মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়। পরবর্তীতে পদ্মা ও মেঘনা একসাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পদ্মা নদীর প্রধান উপনদী দুটো হল: মহানন্দা এবং পুনর্ভবা। পদ্মা নদীর প্রধান শাখা নদী গুলো হল:
- গড়াই
- আড়িয়াল খাঁ
- কুমার
- মাথাভাঙ্গা
- কপোতাক্ষ ও বড়াল।
পদ্মা নদীর প্রধান প্রশাখা নদী গুলো হল: ভৈরব, পশুর, মধুমতি। পদ্মা নদীর এই প্রশাখা নদী গুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জেলা: সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, যশোর, বাগেরহাট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
২) মেঘনা নদী
পদ্মা নদীর মতো আরেকটি বড় নদী বাংলাদেশ মেঘনা নদী বা মেঘনা আপার নদী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা বিভাগ এবং বরিশাল বিভাগ এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই নদীটি প্রবাহিত হয়। কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভোলা জেলার উপর দিয়ে মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের বহমান মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার (৯৭ মাইল)। “বরাক” নদী আসামের পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট হয়ে শেরপুর অঞ্চলে সুরমা এবং কুশিয়ারা নামে এই নদীটির দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলায় এসে এক হয়ে এই নদীটি “কালনি” নাম ধারণ করেছে।
কালনি নামে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়। এ পর্যায়ে নদীটি মেঘনা নাম ধারণ করে আরো কিছুটা অগ্রসর হয়ে চাঁদপুরে সরাসরি পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়। মেঘনা নদী থেকে সৃষ্ট চর অঞ্চলে বেশকিছু ইউনিয়ন এবং গ্রাম গড়ে উঠেছে। মেঘনা নদীর চর থেকে সৃষ্ট ইউনিয়ন এবং গ্রাম গুলোর নাম হল:
- ঢালচর ইউনিয়ন,
- রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন,
- ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন,
- চর কুকরী মুকরী,
- চরগাজীপুর মনিপুর,
- ফতেজংগপুর,
- ঈশানবালা,
- দিয়ারা,
- চরকাশিম,
- বাবুরচর,
- চররাও,
- চর আলেকজান্ডার,
- ষষ্ঠখণ্ড বোরোচর,
- লগ্গিমারা,
- নীলকমল।
৩) যমুনা নদী
বাংলাদেশের প্রধান তিনটি বড় নদীর মধ্যে যমুনা নদী অন্যতম। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান শাখা হিসেবে যমুনা নদী পরিচিত। যমুনা নদী বাংলাদেশ ছাড়াও তিব্বত, চীন এবং ভারতের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে বিরাজমান। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র গতিপথ পরিবর্তন হয় এবং বর্তমান যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এবং এই গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণাভিমুখী যমুনা নদী নামে অগ্রসর হয়ে আরিচায় গঙ্গা নদীর সঙ্গে একত্রিত হয়। মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সংঘটিত বন্যা এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে যমুনা নদী।
২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, যমুনার গড় নতিমাত্রা ১:১১,৮৫০। বিশাল এই নদীটির পলিবহন ক্ষমতাও দারুন। মে মাস থেকে জুলাই অর্থাৎ বর্ষা ঋতুতে প্রতিদিন যমুনা নদী পলি বহন করে প্রায় ১২ লক্ষ টন। এবং যমুনা নদীর বার্ষিক পলি বহন ক্ষমতা প্রায় ৭৩৫ মিলিয়ন টন। রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগ এর উপর দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল)। যেসব জেলার উপর দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়েছে তা হল:
- জামালপুর জেলা,
- টাঙ্গাইল জেলা,
- সিরাজগঞ্জ জেলা,
- পাবনা জেলা,
- গাইবান্ধা জেলা।
৪) কর্ণফুলী নদী
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ নদী হিসেবে কর্ণফুলী নদী পরিচিত। কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি সর্পিলাকার নদী হিসেবে প্রবাহিত। বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে প্রবাহমান কর্ণফুলী নদীর প্রশস্ততা হল ৬৬৭-মিটার (২,১৮৮ ফু)। ভারতের মিজোরাম থেকে নদীটি উৎপন্ন হয়ে ২৭০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। কর্ণফুলী নদীতে সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে “পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র” নির্মিত হয়েছিল। “কর্ণফুল” শব্দ থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি হয়েছে বলে চট্টগ্রামের আরব ব্যবসায়ী এবং বণিকরা বিশ্বাস করেন। কর্ণফুলী নদী থেকে সৃষ্ট চর গুলোর নাম হল:
- হালদা চর,
- লুকিয়া চর,
- জুলদিয়া চ্যানেল,
- কুলাগাঁও চর।
কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ স্থাপন করে রাঙ্গামাটি জেলায় কাপ্তাই বাঁধ তৈরি করা হয় ১৯৬৪ সালে। এবং এই বাঁধে সঞ্চয় করে রাখা পানি ব্যবহার করে “কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর বাংলাদেশের অংশের দৈর্ঘ্য হল ১৬১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৫৩ মিটার।
৫) ব্রহ্মপুত্র নদী
এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদ হিসেবে ব্রহ্মপুত্র নদ পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদ এর পুরনো নাম লৌহিত্য থাকলেও পরবর্তীতে ব্রহ্মার পুত্র এর নাম অনুসারে নদীটি “ব্রহ্মপুত্র নদ” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন এবং ভারতের উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী প্রবাহমান। ব্রহ্মপুত্র নদীর দৈর্ঘ্য হল ২,৮৫০ কিলোমিটার (১,৭৭০ মাইল) এবং অববাহিকা ৬,৫১,৩৩৪ বর্গকিলোমিটার (২,৫১,৫০০ বর্গমাইল)। ভারতের তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে চীন এবং মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে শিয়াং এবং দিহাং নাম ধারণ করে লোহিত নামে দুটি নদী একত্রিত হয়েছে। পরবর্তীতে এই সম্মিলিত জলভাগ সবগুলো একত্রিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করে। ব্রহ্মপুত্র নদীর উপনদী গুলো হলো:
- তিস্তা নদী,
- দুধকুমার,
- করতোয়া আত্রাই প্রণালী,
- সোবণশিরি,
- ধনশিরি,
- মানস,
- লোহিত,
- বুড়িদিহিং,
- সোবণশিরি।
ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী গুলো হল:
- বংশী
- শীতলক্ষ্যা
- সাতিয়া
- বানার
- শ্রীকালি।
৬) তিস্তা নদী
বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি আন্ত সীমান্ত নদী হিসেবে তিস্তা নদী পরিচিত। ভারত এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহমান এই নদী পাউহুনরি, জেমু হিমবাহ, ছো লামো হ্রদ, উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় মিলিত হয়। তিস্তা নদীর বর্তমান দৈর্ঘ্য ১৭৭ কিমি (১১০ মা) এবং অববাহিকার আকার ১২,৫৪০ কিমি২ (৪,৮৪০ মা২)। বাংলাদেশের ফুলঝুরি উপজেলা এবং গাইবান্ধার উপর দিয়ে তিস্তা নদী বিরাজমান। তিস্তা নদীর নাম উঠে এসেছে ত্রিস্রোতা বা তিন প্রবাহ থেকে। ১৭৮৭ সালে বন্যার কারণে নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং রংপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়। যেসব জেলার উপর দিয়ে তিস্তা নদীর প্রবাহিত হয়েছে তা হল:
- কুড়িগ্রাম জেলা
- লালমনিরহাট জেলা
- নীলফামারী জেলা।
তিস্তা নদী পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের প্রধান নদী হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে। সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের জীবন ধরা অনেকাংশে নির্ভর করে তিস্তা নদীর উপর। ভারতের যেসব জেলার উপর তিস্তা নদী প্রবাহমান তা হল:
- মংগন জেলা,
- দার্জিলিং জেলা,
- কোচবিহার জেলা,
- জলপাইগুড়ি জেলা,
- কালিম্পং জেলা,
- পাকইয়ং জেলা।
৭) শীতলক্ষ্যা নদী
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন নদী হল শীতলক্ষ্যা নদী। এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্প (মসলিন শিল্প) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল। তবে বর্তমানে মসলিন শিল্প বিলুপ্ত হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রচুর পরিমাণে কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিলুপ্ত হওয়া “আদমজি জুট মিল” শীতলক্ষ্যার তীরেই গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর “নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর” এই শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে শীতলক্ষ্যার মোট দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২৮ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শীতলক্ষা নদীর পরিচিতি নম্বর প্রদান করা হয়েছে ৫৫। বাংলাদেশের যেসব জেলার উপর দিয়ে শীতলক্ষা নদী প্রবাহমান তা হল:
- নরসিংদী,
- গাজীপুর,
- ঢাকা,
- নারায়ণগঞ্জ।
উল্লেখ্য যে, শীতলক্ষা নদী ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী যা শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জের পূর্ব দিয়ে কালাগাছিয়ার কাছে মিলিত হয়। পরবর্তীতে “বানার নদী” নাম ধারণ করে ১১ কিলোমিটার সামনে প্রবাহিত হয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে সর্বোচ্চ প্রশস্ততা (৩০০ মিটার) লাভ করে।
৮) গোমতী নদী
বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি আন্ত সীমান্ত নদী হিসেবে গোমতী নদী পরিচিত। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার উপর দিয়ে গোমতী নদী প্রবাহমান। বর্তমানে গোমতী নদীর দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গোমতী নদীর পরিচিতি নম্বর প্রদান করা হয়েছে ০৪। গোমতী নদী বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহমান। ভারতের ডুমুর, ত্রিপুরা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এর উপর দিয়ে নদীটি বিরাজমান। এটি একটি তীব্র খরস্রোতা নদী যার প্রবাহমাত্রা ১০০ থেকে ২০,০০০ কিউসেক পর্যন্ত উঠানামা করে।
৯) সাঙ্গু নদী
সাঙ্গু নদীর অপর নাম শঙ্খ নদী যা চট্টগ্রাম এবং বান্দরবান জেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান। সাঙ্গু নদীর দৈর্ঘ্য ২৯৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১১৯ মিটার। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সাঙ্গু নদীর পরিচিতি নম্বর প্রদান করা হয়েছে ১৫। ব্রিটিশরা এই নদীর নাম সাঙ্গু দিলেও মারমা জনগোষ্ঠী একে শঙ্খ নদী বা স্বচ্ছ পানির নদ হিসেবে অভিহিত করেন। বান্দরবনে প্রায় ৯০ ভাগ মারমা জনগোষ্ঠীর জীবনধারা সাঙ্গু নদীর ওপর নির্ভরশীল। আরাকান পর্বতমালায় সাঙ্গু নদীর উৎপত্তি স্থল। এবং বর্তমানে নদীটি অবস্থান করছে বান্দরবান, লাগপাই এবং থানচি অঞ্চলে।
১০) মাতামুহুরী নদী
বাংলাদেশের বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী প্রবাহমান। মাতামুহুরী নদীর বর্তমান দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫৪ মিটার। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক মাতামুহুরী নদীর পরিচিতি নাম্বার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩।
আরো পড়ুন
মাইভার পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদীটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে প্রবাহমান। নদীটির তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আলীকদম উপজেলা, চকরিয়া এবং লামা অঞ্চল।
১০ টি নদী সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
বাংলাদেশের নবীনতম নদী হলো যমুনা নদী।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং গভীর নদী হিসেবে মেঘনা নদী পরিচিত।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট নদীর নাম হল গোবরা নদী যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর নাম হল কর্ণফুলী।
বাংলাদেশের বৃহত্তম নদীর নাম হল পদ্মা। যার গড় প্রবাহ 30,000m 3/s, প্রায় 76,000m 3/s এর একটি পূর্ণ প্রবাহ।
১০ টি নদী সম্পর্কে আমাদের মতামত
প্রিয় পাঠক/ পাঠিকা, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ১০টি নদীর নাম, নদীর দৈর্ঘ্য, নদীর উৎপত্তিস্থল এবং বাংলাদেশের নদী গুলোর অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীগুলো নিয়ে যাদের আগ্রহ ছিল আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে তার উপকৃত হয়েছেন। এমন আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
১০ টি নদী সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।