কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের ক্ষণস্থায়ী অবস্থাকে সেই স্থানের আবহাওয়া বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেই স্থানের বায়ুর তাপ, বায়ু প্রবাহ, বায়ুর চাপ, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলা হয়ে থাকে। যে কোন স্থানের আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। অর্থাৎ কোন স্থানে সকালবেলা বৃষ্টি হলে সে স্থানে দুপুরে রোদ উঠতে পারে, এত দ্রুত কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের অবস্থা পরিবর্তনকেই আবহাওয়া বলা হয়ে থাকে।
আবার জলবায়ু বলতে বোঝায়, কোন অঞ্চলে অর্থাৎ ৩০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আবহাওয়ার একটি গড় পরিস্থিতি। কোন স্থানে জলবায়ু খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন সময় লাগে। বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ এবং আদ্র প্রকৃতির। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, আবহাওয়া হল আজকের দিনের গড় অবস্থা এবং জলবায়ু হল দীর্ঘদিনের গড় অবস্থা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আবহাওয়া এবং জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্টের বিষয়বস্তু
আবহাওয়া এবং জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য কি
আবহাওয়া এবং জলবায়ুর সংজ্ঞা ভালো করে পড়লেই বোঝা যায় জলবায়ু এবং আবহাওয়ার মধ্যে বিপুল পার্থক্য রয়েছে। আবহাওয়া প্রতি ঘন্টায় পরিবর্তন হতে পারে যা জলবায়ু পারেনা। আবহাওয়া ও জলবায়ুরে পার্থক্য চলমান থাকে। আবহাওয়ার কিছু চলমান বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
- আবহাওয়া ক্ষণিকের জন্য পরিবর্তনশীল হয়, অর্থাৎ খুব দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
- আবহাওয়ার প্রভাব থাকে কয়েক ঘন্টা, দিন, কিংবা সপ্তাহের জন্য।
- আবহাওয়া বিশ্লেষণ করার সময় তাপমাত্রা, বৃষ্টি এবং বাতাসের বিষয়গুলো উঠে আসে।
অপরদিকে জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
- সর্বনিম্ন ৩০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে একত্রিত তথ্যসমূহ থেকে জলবায়ু তৈরি হয়ে থাকে।
- জলবায়ু একেক জায়গায় একেক রকম হতে পারে, যেমন: মরুভূমিতে জলবায়ুর ধরন হবে শুষ্ক।
- জলবায়ুর পরিমাপ বা গঠনের ধরন পরিমাপ করার সময় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা এবং বাতাসের গড় ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য গুলো টেবিল আকারের নিচে প্রকাশ করা হলো:
আবহাওয়া | জলবায়ু |
একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির দৈনন্দিন অবস্থা গুলোকে আবহাওয়া বলা হয়ে থাকে। | অপরদিকে, একটি বিস্তৃত অঞ্চলে সর্বনিম্ন ৩০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫০ বছর সময় পর্যন্ত আবহাওয়ার গড় পরিস্থিতিকে জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। |
বায়ুমন্ডলের নিম্ন স্তরের পরিস্থিতি যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় তাকে আবহাওয়া বলে। | বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরের দীর্ঘদিনের সামগ্রিক অবস্থা যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় না তাকেই জলবায়ু বলে। |
একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ পরিসরে বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থা আবহাওয়া তৈরি করে থাকে। | একটি বিস্তীর্ণ খোলা অঞ্চল যা বায়ুমন্ডলের দীর্ঘকালীন গড় অবস্থান নির্দেশ করে থাকে |
আবহাওয়া পরিবর্তনের কোন নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, অর্থাৎ একটি স্থানের আবহাওয়া প্রতিদিন এমনকি প্রতি ঘন্টায় পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। | একটি স্থানের জলবায়ু পরিবর্তন হতে কমপক্ষে ৩০ বছর বা তার বেশি সময় গ্রহণ করতে পারে। কোনভাবেই একটি স্থানে জলবায়ু প্রতিদিন বা প্রতি ঘন্টায় পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ নেই। |
স্থান ভেদে আবহাওয়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেমন এক কিলোমিটার এর মধ্যে যে ধরনের আবহাওয়া থাকবে পরের আর এক কিলোমিটারে আবহাওয়া অন্যরূপ থাকতেই পারে। | জায়গা ভেদে এবং ঋতুর উপর জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। |
জলবায়ুর বিভিন্নতা নিয়েই আবহাওয়া তৈরি হয়। | বিভিন্ন আবহাওয়ার সমন্বয় নিয়ে জলবায়ু তৈরি হয়ে থাকে। |
আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিমাপ পদ্ধতি
আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিমাপ পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। চলুন এক নজরে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিমাপ পদ্ধতি দেখে আসা যাক:
আবহাওয়ার পরিমাপ পদ্ধতি
আবহাওয়া পরিমাপ করার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: থার্মোমিটার (তাপমাত্রা পরিমাপে), ব্যারোমিটার (বায়ুর চাপ পরিমাপে), এবং অ্যানিমোমিটার (বাতাসের গতি পরিমাপে)। মূলত একটি স্থানের তাপমাত্রার পরিমাপ, বায়ুর চাপের পরিমাপ, বাতাসের গতি পরিমাপ করলেই সে স্থানের আবহাওয়া সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়।
জলবায়ুর পরিমাপ পদ্ধতি
আবহাওয়া পরিমাপ করার জন্য যেমন নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রপাতি হলেই সে স্থানের গড় আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যেই নির্ণয় করা সম্ভব জলবায়ুর ক্ষেত্রে তেমন নয়। একটি স্থানে জলবায়ুর পরিমাপ নির্ণয় করার জন্য সে স্থানের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড় তথ্য জানতে হয়। বিভিন্ন বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা দীর্ঘমেয়াদী গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে থাকে। এবং তাপমাত্রা ও বৃষ্টি পাতের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে তার উপর গবেষণার মাধ্যমে জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে থাকে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। চলুন এক নজরে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব দেখে আসা যাক:
১. কৃষি ক্ষেত্রে
কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের বীজ বপন থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া এবং জলবায়ুর একটি বিরাট প্রভাব রয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আদ্রতা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত বৃষ্টি যেমন ফসল নষ্ট করতে পারে তেমন খরা ফসল নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্রভাব কৃষি ক্ষেত্রে কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না।
২. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে
তাপমাত্রা এবং জলবায়ুর প্রভাব কৃষি ক্ষেত্রে যেমন পরে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও একইভাবে পড়ে। উচ্চ তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং পরিবেশ দূষণ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে মানুষ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়া এবং জলবায়ুর হঠাৎ পরিবর্তন শিশুদের জন্য খুব মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়।
৩. পরিবেশের দিক দিয়ে
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি পরিবেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া মাটি ক্ষয়, বন্যা, খরা ইত্যাদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।
৪. অর্থনীতি ক্ষেত্রে
অর্থনীতির কয়েকটি খাত রয়েছে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্রতি নির্ভরশীল। কৃষি, পর্যটন এবং শিল্পক্ষেত্র আবহাওয়া এবং জলবায়ুর ওপর নির্ভর করেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। আবহাওয়া এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এসব অর্থনৈতিক খাতের জন্য খুবই খারাপ ফল বহন করে, যা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
FAQ
১)আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়?
উঃ আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল গুলো হল: তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ। এবং অমিল গুলো হল: আবহাওয়া একটি সাময়িক অবস্থা কিন্তু জলবায়ু একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা।
২)জলবায়ু কত প্রকার ও কি কি?
উঃ জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ গুলো হল: গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, নিরক্ষীয় জলবায়ু, মৌসুমী জলবায়ু, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, হীমমণ্ডলীয় জলবায়ু।
৩)আবহাওয়া ও জলবায়ু কি কারণে পরিবর্তন হয়?
উঃ পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তনগুলি সূর্যের আলো দ্বারা প্রাপ্ত সৌর শক্তি পরিমাণ এবং বিতরণকে প্রভাবিত করতে পারে। এতে করে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন
আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের মতামত
আবহাওয়া ও জলবায়ু দুইটা আলাদা উপাদান হলেও জলবায়ু আবহাওয়ার উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। আবহাওয়ার প্রতিটি উপাদান দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ুর অবস্থা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে যদি আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থেকে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। এমন আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জুড়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।